জাতিসংঘ ও এর গঠন (পাঠ ২)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় - বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা | NCTB BOOK
803
Summary

জাতিসংঘ গঠনের পটভূমি

বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ সালে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ১৯৩৯ সালে। এসব যুদ্ধ মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে বাধা দেয় এবং শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা শুরু হয়। ১৯২০ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অব নেশনস গঠিত হয়, কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ববাসীর মনে শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পায় এবং ১৯৪১ সালে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা শুরু হয়।

১৯৪৫ সালের ২৪ অক্টোবর জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জাতিসংঘের গঠনে মোট ছয়টি সংস্থা রয়েছে:

  • সাধারণ পরিষদ
  • সচিবালয়
  • অছি পরিষদ
  • আন্তর্জাতিক আদালত
  • অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
  • নিরাপত্তা পরিষদ

শুরুতে সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১, বর্তমানে ১৯৩। জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব ছিলেন ট্রিগভেলি এবং বর্তমান মহাসচিব অ্যান্টনিও গুতেরেস। জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্কে অবস্থিত। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে এর সদস্যপদ লাভ করে। জাতিসংঘের পতাকা হালকা নীল রঙের, যার মধ্যে পৃথিবীর মানচিত্র রয়েছে এবং দুটি জলপাই পাতার ঝাড় দিয়ে বেষ্টিত। জাতিসংঘের ছয়টি দাপ্তরিক ভাষা হলো: আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্পেনিশ।

জাতিসংঘ গঠনের পটভূমি

আমরা জানি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে মাত্র ২৫ বছরের ব্যবধানে পৃথিবীতে দুটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়। প্রথমটি হয় ১৯১৪ সালে এবং দ্বিতীয়টি শুরু হয় ১৯৩৯ সালে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এসব যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বিরাট বাধা। সেজন্য যুদ্ধের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী চলেছে শান্তি স্থাপনের প্রচেষ্টা। তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ১৯২০ সালে গঠিত হয়েছিল সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বা লীগ অব নেশনস। কিন্তু বিভিন্ন দেশের স্বার্থপরতার কারণে এ সংস্থাটি স্থায়িত্ব লাভকরেনি। ফলে ১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীকে গ্রাস করে। এ যুদ্ধে বিভিন্ন দেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। জাপান আণবিক বোমার আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়ে যায়। মারা যায় লাখ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসলীলা দেখে বিশ্ববাসী শংকিত ও হতবাক হয়ে যায়। তাদের মনে দানা বাঁধে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষা। এছাড়া তারা অনুভব করে মানব কল্যাণের জন্য যুদ্ধকে পরিহার করতে হবে।

দেশগুলোকে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসতে হবে। ফলে ১৯৪১ সাল থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা হাতে নেয়। তৎকালীন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট-এর উদ্যোগে এবং বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনার মাধ্যমে ১৯৪৫ সালের ২৪-এ অক্টোবর তারিখে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ন্যায় অন্য কোনো যুদ্ধের ধ্বংসলীলা থেকে মুক্তির জন্য জাতিসংঘের জন্ম হয়।

জাতিসংঘ গঠন

জাতিসংঘ মোট ছয়টি সংস্থা বা শাখা নিয়ে গঠিত।
শাখাগুলো নিম্নরূপ:
ক) সাধারণ পরিষদ
খ) সচিবালয়
গ) অছি পরিষদ
ঘ) আন্তর্জাতিক আদালত
ঙ) অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ
চ) নিরাপত্তা পরিষদ

শুরুতে জাতিসংঘের সদস্য সংখ্যা ছিল ৫১। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ১৯৩। জাতিসংঘের মহাসচিব হচ্ছে এর প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা। নরওয়ের অধিবাসী ট্রিগভেলি ছিলেন জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব। বর্তমান (জানু-২০১৭ হতে) মহাসচিবের নাম অ্যান্টনিও গুতেরেস (Antonio Guterres)। তিনি পর্তুগালের অধিবাসী। জাতিসংঘের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।

জাতিসংঘের নিজস্ব পতাকা আছে। পতাকাটি হালকা নীল রঙের। মাঝখানে সাদার ভিতরে বিশ্বের বৃত্তাকার মানচিত্র রয়েছে। এর দুইপাশ দুটি জলপাই পাতার ঝাড় দিয়ে বেষ্টিত।

জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা ছয়টি। এগুলো হলো: আরবি, চাইনিজ, ইংরেজি, ফরাসি, রাশিয়ান ও স্পেনিশ। জাতিসংঘের যেকোনো সভায় এই ছয়টি ভাষার যেকোনো একটি ব্যবহার করা হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাকি ভাষাগুলোতে অনুবাদ হয়ে যায়। তবে ইংরেজি ভাষার উপর বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়ে থাকে।

কাজ: জাতিসংঘের গঠন সম্পর্কিত উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত রচনা তৈরি কর।
Content added By
Promotion
NEW SATT AI এখন আপনাকে সাহায্য করতে পারে।

Are you sure to start over?

Loading...